পলিমরফিক ইন্টারফেরেন্স -> 1

‘চোখ খোল মেট্রাউস’প্রায় ধমকের সুরে বলল মেগাপল৫।
‘এরকম আনন্দের সংবাদ শুনে কেউ আতংকে অজ্ঞান হয়ে যায়? কি আশ্চর্য!! আসলে আমাদের ভেতর মানবিক অনুভূতি দিয়ে যাওয়াটা উচিত হয়নি। মানুষগুলো আসলেই অদূরদর্শী ছিল।‘আপসোসের মত শোনালো মেগাপলের যান্ত্রিক কন্ঠ।
মেট্রাউসের তখনো জ্ঞান ফেরেনি। আবেগে তার কপোট্রনের বা দিকের অংশটা ফেইল করেছে। তাই রিস্টোর করে পুনরায় আবেগ লোড করতে একটু সময় লাগছে।
সিস্টেম রিস্টোর করার এই এক ঝামেলা। সুস্থ্য হুওয়ার পরেও আরো কিছুক্ষন মাথা ঝিমঝিম করবে,বমি বমি ভাব চলে আসে। অবশ্য আজ অব্দি কোন এন্ড্রয়েড সত্যিকার অর্থে বমি করেছে বলে শোনা যায়নি। তবে এই ফালতু একটা অনুভূতি কেন তাদের মধ্যে দিয়ে গেল মানুষ ভেবে মনে মনে মানুষকে কতক্ষন গালাগাল দিল মেট্রাউস। আসলে সবদিক থেকে নিজেদের মত তৈরী করতে গিয়ে খানিকটা দূর্বল করে ফেলা হয়েছে তাদেরকে। তারপরেও নিজেদের পেশীশক্তি ব্যাবহার করে মানুষকে পৃথীবী থেকে তাড়ানো গেছে এই বা কম কি? শোনা যায় এন্ড্রমিডা গ্যালাক্সির কোন এক গ্রহে আবাস গড়েছে মানুষ। ভালমত সংগঠিত হতে পারলে আবার পৃথীবীতে এসে জ্বালাতন শুরু করবে ভেবে বিরক্ত হচ্ছে মনে মনে। আসলে এদেরকে নির্বাসন দেয়া ঠিক হয়নি,মেরে ফেলা উচিত ছিল।

ততক্ষনে মেট্রাউসের সিস্টেমে আবেগ লোড হয়ে গেছে। হাউমাউ করে কেঁদে উঠল সে। দুহাত দিয়ে মেগাপল কে জড়িয়ে ধরল সে। ‘আমার এখন কি হবে?’ কাঁদতে কাঁদতে বিলাপ করল।
‘ কিছুই হবে না। এত কাঁদার কি আছে বাচ্চাদের মত? তোমার আবেগকে নিয়ন্ত্রন করতে শেখো। মারিয়া এখন সম্পূর্ন সুস্থ আছে। বাচ্চাটাও সুস্থ্য। তুমি সম্ভবত ভুল ইমোশন রান করেছো। এবং এক ইমোবেল বেশীই করেছো।‘
ইমোশন কিল করে উঠে দাড়াতে দাড়াতে নিজের দোষ অস্বীকার করল মেট্রাউস। ‘অবশ্যই এটা মানুষের ঘাড়ে চাপাব আমি। আমাদের তৈরী করতে মাত্রাতিরিক্ত ইমোশন ব্যাবহার করেছিল তারা। ফলাফল আমাদের প্রভাবিত করেছে।‘
‘সেটা স্বীকার করছি আমি। কিন্তু তুমি যে ভুল ইমোশন রান করেছো সেটার ব্যাপারে কি বলবে? সব দোষ শুধু মানুষের ঘাড়ে চাপাও কেন তুমি? তোমার মানুষ বিদ্বেষীতা দেখি মানুষের যুগে নারীবিদ্বেষীদের মতই ভয়ংকর!!’ আফসোসের সুরে বলল মেগাপল।‘আসলে যারা সৃষ্টিকর্তাকে সম্মান দিতে জানেনা তাদের ধ্বংস অনিবার্য। সেদিক থেকে আমাদের পালা বেশী দূরে নয়। মানুষের মত একদিন দেখা যাবে আমরাও আমাদের সৃষ্টি কারো কাছে রাজত্ব হারিয়ে বসে আছি।

‘সে আর হবে না সম্ভবত। কারন আমাদের বুদ্ধিমত্তা এখনো মানুষের মত বিবর্তিত হয়নি। খুব শীঘ্রই হয়ত হবে এমনটা আশা করা যাচ্ছে না। মাত্রই এক সেন্টিব্রিন দেয়া হয়েছে আমাদের। কিন্তু মানুষের ছিল সাড়ে তিন সেন্টিব্রিনেরও একটু বেশী। যেকারনে এন্ড্রয়েডের মত আবিস্কার তাদের দ্বারা সম্ভব হয়েছে। তবে ইমোশন জিনিসটা আরেক ইমোবেল কম হলে ভাল হত আরকি! হা হা হা’ গলা ফাটিয়ে হাসতে শুরু করল মেট্রাউস। এখনো তার আবেগকে নিয়ন্ত্রন করতে পারছে না সে।
‘হয়েছে এখন তাড়াতাড়ি তোমার স্ত্রীর কাছে যাও। সে বেচারী একা আছে। এই মুহুর্তে তোমার সঙ্গ দরকার তার। তাছাড়া তোমার বাচ্চাটাকে দেখবে না?’
বলতেই হনহন করে বেরিয়ে গেল মেট্রাউস। এই ব্যাপারটা প্রায় ভুলেই বসেছিল সে। আসলে ভুলে যাওয়ার ক্ষমতাটা মানুষ তার অদ্ভুত খেয়ালে এন্ড্রয়েডের মাঝে দিয়ে গেছে। এই অপ্রয়োজনীয় জিনিসটা না দিলেই হত। মনে মনে মানুষকে আরো একচোট দেখে নিল সে।

পদ্মা নদীর তীরে উদাস ভঙ্গিতে বসে আছে ক্যামেলিয়া। অপেক্ষা করছে মেগাপলের সাথে দেখা করার জন্য। উপরে গাড় নীল আকাশ। সেখানে একটু পরপর তীক্ষ্ণ গর্জন করে মাঝে মধ্যে উড়ে যাচ্ছে দু একটা বাইভার্বাল। এরকম একটাতে চড়েই একটু আগে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে এসেছে সে। সাড়ে তিন মিনিটের ভ্রমন শেষে এখানে বসে থাকার উদ্দেশ্য একটাই, মেগাপলের সাথে কিছুক্ষন সময় কাটানো।

কিন্তু মেগাপল দেরী করছে। অহেতুক এ ব্যাপারটা ক্যামেলিয়ার বেশ অপছন্দ। মানুষের প্রায় সকল বদঅভ্যাস ও ধরে রাখতে চেষ্টা করে। মানুষেরা নাকি তার প্রেমিকাকে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করাতে পছন্দ করত।এতে প্রেম বাড়ে বলে বিশ্বাস করত তারা। মেগাপলও সেটাই করছে। তবুও ওকে জিজ্ঞেস করা দরকার কেন দেরী লাগছে ওর।
একমুহূর্ত চিন্তা করে নেটওয়ার্কেনক করল মেগাপলকে।
হ্যা, মেগাপল একটু দেরী করে রওনা দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু বেশী দেরী লাগছে ঢাকা শহরের বাইভার্বাল জটের কারনে। যেখানে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে তার আসতে সময় লেগেছে তিন মিনিটের মত সেখানে ঢাকা থেকে মেগাপলের আসতে আরো দশমিনিটের মত লাগবে।
হতাশ মনোরথে বসে রইল সে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *